২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত সরকার ৭ মে ‘অপারেশন সিনদুর’ নামের প্রতিশোধী অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে নিশ্ছিদ্র ও নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত চালায়। পাকিস্তান দাবি করে এর ফলে পাঁচটি ভারতীয় বিমান ধ্বংস হয়েছে, যদিও তা এখনও যাচাই হয়নি।অভিযানের পর অব্যাহত সীমান্তবর্তী গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১৩ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়েছেন, পাশাপাশি ভারতের এক সৈনিক, লাঁন্স নায়েক দিনেশ কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলা ও উত্তেজনার বৃদ্ধি
২২ এপ্রিল ২০২৫ সালে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন, যার মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় ও ১ জন নেপালি ছিলেন। এ হামলার দায়জিজ্ঞাসায় ভারতীয় অভিযুক্ত গোষ্ঠী হিসেবে জইশ-এ-মোহাম্মেদ ও লস্কর-এ-তৈয়বের নাম উঠে আসে, যা লালার শোধবোধের প্রতীক হিসেবে ‘সিনদুর’ শব্দে অভিযানের নামকরণে প্রতিফলিত হয়। উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠার পর সীমান্তে অবাধ গোলাবর্ষণ ও উত্তাল কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের দিকে নিয়ে যায়।
অপারেশন সিনদুর: ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা
ভারতীয় সামরিক সূত্র জানায়, অভিযানে সম্মিলিতভাবে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়, যার মধ্যে প্রধান মার্কাজ সুবহান আল্লাহ (বাহাউয়ালপুর) ও সৈয়দনা বিলাল ক্যাম্প (মুজাফফরাবাদ) উল্লেখযোগ্য। এ ঘাঁটিগুলি ছিলো সংগঠিত হামলার পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, যার ফলে তাদের অবকাঠামোয় নির্মূল আক্রমনই মূল উদ্দেশ্য ছিল। ভারত জানায়, আঘাতটি উচ্চ নিখুঁত SCALP ক্রুজ মিসাইল ও HAMMER প্রিসিশন বোম্বের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে, যাতে আশপাশের বেসামরিক এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারতের সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি
১. মানবিক ক্ষয়ক্ষতি
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নির্ধারিত (নন-মিলিটারি) তথ্য অনুযায়ী, এই অভিযানের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারতীয় সংঘর্ষ সীমান্তে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়েছেন। একই সময় চলমান গোলাবর্ষণে লাঁস নায়েক দিনেশ কুমারের মৃত্যু হয়; তাঁর শেষকৃত্য উত্তরপ্রদেশের মোহাম্মদপুরে জাতীয় সম্মানে সম্পন্ন হয়।
২. সামরিক ক্ষেত্রের লোকসান
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দাবী অনুযায়ী ভারতীয় বিমানের মধ্যে অন্তত পাঁচটি বিমান গুলিবর্ষণে ধ্বংস হয়েছে, যদিও ভারত তা অস্বীকার করে। তবে ওখানকার স্থানীয় নিউজ চ্যানেল গুলো বিমান ধ্বংসের সত্যতা যাচাই করেছে। তিনটি বিমান ধ্বংস হয়েছে, যেগুলো হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং তাদের পাইলটদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইনানুগভাবে ভারতীয় বাহিনী যন্ত্রপাতি বা নিরাপত্তা পণ্যের ক্ষতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন বিবরণ প্রকাশ করেনি।
পর্যালোচনা ও প্রভাব
১. কৌশলগত ফলাফল
অপারেশন সিনদুরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী কাঠামোর বেশিরভাগ অবকাঠামোর ধ্বংসের দাবি করলেও, দীর্ঘমেয়াদী সন্ত্রাস দমন দক্ষতায় এ ব্যাপারে মতবৈষম্য রয়েছে। ‘ট্রিগার-ওয়ার্ড’ টাইমলাইন-ভিত্তিক বিশ্লেষণ দেখায় যে, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে precision strike কৌশল কার্যকর হলেও সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত থাকে।
২. কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব পাকিস্তান-ভারত উভয় পক্ষকে সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’দেশকেই উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রয়োজন হলে মধ্যস্থতা করার প্রস্তুতি প্রকাশ করেছেন।
অপারেশন সিনদুর সামরিক ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতীয় পক্ষের প্রতিশোধী পদক্ষেপ প্রতিফলিত করলেও মানবিক ও সামরিক উচ্চ ক্ষয়ক্ষতি দেশীয় জনমত ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে জটিল প্রশ্ন তোলে। ১৩ জন বেসামরিক নিহত, ৫৯ জন আহত ও অন্তত একজন সৈনিকের প্রাণান্তক যাতনা ছাড়াও, বিমানের বিধ্বস্ত এবং আশপাশের অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও মানবিক প্রভাব অপারেশনটির দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল সংশয়ের মধ্যে রাখে। আন্তর্জাতিক চাপ ও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার অব্যাহত প্রবাহ এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে পুনরায় ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে।