ফাতাহ-২: পাকিস্তানের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত?

ফাতাহ-২: পাকিস্তানের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ঘিরে উত্তেজনা ও প্রশ্ন

পাকিস্তান আবারও নিজের সামরিক শক্তির জানান দিল। শুক্রবার দেশটি একটি নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা জানিয়েছে। এর নাম—ফাতাহ-২

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এটি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এবং স্যাটেলাইট-নির্ভর গাইডিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে।

এটা এমন এক সময় হলো, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে পাকিস্তান সম্প্রতি পাল্টা হামলার ঘোষণা দেয়। সেই প্রেক্ষাপটে এই নতুন মিসাইলের পরীক্ষাকে শুধু সামরিক উন্নয়ন না বলে রাজনৈতিক বার্তাও বলা যেতে পারে।

ঠিক কী আছে ফাতাহ-২–এ?

Fatah 2 missile

এই ক্ষেপণাস্ত্রটি আগের ‘ফাতাহ-১’-এর পরবর্তী সংস্করণ। নতুন এই সংস্করণ আরও উন্নত। লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত হানার জন্য এতে আধুনিক গাইডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একধরনের ‘গাইডেড মাল্টিপল রকেট লঞ্চ সিস্টেম’। অর্থাৎ, একই সঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তবে এ নিয়ে সেনাবাহিনী বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।

কেন এই সময়?

এই প্রশ্ন এখন অনেকের। বিশেষ করে, যখন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে টানটান উত্তেজনা চলছে। কয়েকদিন আগেই পাকিস্তান অভিযোগ করে, ভারতের পক্ষ থেকে তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’ নামে পাল্টা জবাব দেয়।

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই ফাতাহ-২ উৎক্ষেপণ। বিষয়টি শুধু কাকতালীয়? না কি ইচ্ছাকৃত সময় নির্বাচিত?—তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী?

ভারতের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়। ভারতেরও নিজস্ব অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের খবর মাঝেমধ্যে শোনা যায়।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ম্যাথিউ রিচার্ডসন এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বলা যাবে না। এটি প্রতিবেশীদের জন্য একধরনের বার্তাও।”

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রতিক্রিয়া কেমন?

দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফাতাহ-২-এর প্রশংসা করা হয়েছে। ডন ও জিও নিউজের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী ও সাধারণ নাগরিকরা এটিকে আত্মরক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড় অর্জন মনে করছেন।

তবে কিছু মানুষ আবার সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, “অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এত বড় সামরিক ব্যয় কতটা যৌক্তিক?”

শেষ কথা

ফাতাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র এখন কাগজে-কলমে পাকিস্তানের একটি বড় অর্জন। তবে এটি আদৌ যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে কিনা, তা ভবিষ্যৎ বলবে। আপাতত এটুকু বলা যায়—এই ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, আর প্রতিবেশীদের মনে কিছু প্রশ্ন তুলবেই।

Leave a Comment